শেষ পাতা
-সুনির্মল বসু
কবে আছি, কবে নেই, এই কথা ভাবতে ভাবতে ভদ্রলোক জীবন কাহিনী লেখা শুরু করলেন, জীবন কথা লেখা খুব শক্ত কাজ, আসল জীবন থেকে লিখিত জীবন অন্য কথা বলে।অথচ, নিজের জীবন নিয়ে মিথ্যার বেসাতি করা ভদ্রলোকের মন পছন্দ নয়, রাত জেগে তিনি স্মৃতির বন্ধ দরজা খুলে দেন, স্মৃতির সিন্দুকে কত কষ্ট দুঃখের মণিমাণিক্য, কত চোখের জল ভৌতিক অন্ধকারে লুকিয়ে আছে, সুখ খুঁজতে গিয়ে কত অসুখের সালতামামি রয়েছে,
ভাবনার পথে হাঁটতে হাঁটতে তিনি কতদূর দুরান্তরে চলে যান, কত নদী বন্দর কত আরণ্যক পৃথিবী পেরিয়ে আলোকবর্ষ অতিক্রম করে, চালচুলোহীন তিনি দিকশূন্যপুরের দিকে এগিয়ে চলেন,
স্মৃতিগুলো কিছুতেই তাঁর পিছু ছাড়ে না,
সুখের দিনগুলো একদিন স্বপ্ন দেখাতো, দুঃখের দিনগুলো আজকাল তাঁকে ঠাট্টা করে চলে, স্মৃতির সরণিতে কত উন্মনা মুখ হেঁটে যায়।
যে প্রাক্তন প্রেমিকা মুখের উপর অতীতে একদিন দরজা বন্ধ করে দিয়ে অন্য পুরুষের হাত ধরেছিল, জীবনের প্রান্তসীমায় এসে তার জন্য মনে করুণা জাগে, অথচ একদিন কত স্বপ্ন জেগেছিল জীবনের প্রথমভাগে,
মধ্যরাতে মগ্ন চৈতন্যে জেগে থেকে ভদ্রলোক জীবন লিপির খেরোর খাতা ভরিয়ে তোলেন,
যারা তাঁকে একদিন সত্যিকারের ভালোবাসা দিতে চেয়েছিল, তিনি তাদের অগ্রাহ্য করে যান, তিনি যাদের ভালোবেসে ছিলেন, তাঁরা নিজেদের সুযোগ-সুবিধা নিতে এসেছিল তাঁর কাছে, কাজ গুছিয়ে পগার পার।
জীবন কাহিনীর শেষ পাতায় ভদ্রলোক লিখলেন, জীবনটাকে ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না, বহু কষ্ট করে আমি যে জীবন কাহিনী লিখে গেলাম, তার কোন প্রয়োজন ছিল না, আমার নিরর্থক জীবন ভারবাহী জন্তুর মতো, এই জীবন কাহিনী কারো পাঠযোগ্য হতে পারে না, আমার বাতিল জীবনের মতো, আমার বাতিল জীবন কাহিনী আপনারা কেউ দয়া করে পড়বেন না।